আজিজুল ইসলাম বারী, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত ৮ অক্টোবর দীর্ঘ ১২ বছর পরে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দুইটি গ্রুপের অন্তদ্বন্দ্বের কারণে কমিটি ঘোষণা না করেই সম্মেলন স্থগিত করা হয়।

সেখানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী শাহাজান খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাখওয়াত খান শফিকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের দুইটি গ্রুপের অন্তদ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের।

গ্রুপ দুইটির একটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সসাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি ও অপর গ্রুপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল হক।

সম্মেলন স্থগিত হলেও গত ১৯ নভেম্বর দুপুরে তিস্তা ব্যারাজের অবসর রেষ্ট হাউসে জেলা আওয়ামী লীগের সভায় একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সিরাজুল হক গ্রুপকে বঞ্চিত করে সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আলীকে সভাপতি ও সাবেক সম্পাদক রফিকুল আলমকে সম্পাদক করা হয়। এছাড়া ৭১ সদস্যের উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি দেওয়া হয়। একটি গ্রুপকে সমুলে বঞ্চিত করায় বঞ্চিত গ্রুপটি হাইব্রিড কমিটি বাতিলের দাবিতে দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিলসহ টানা কর্মসুচি পালন করে আসছিল।

এদিকে শনিবার বিকেলে নতুন কমিটির নেতারা বিএনপি জামাতায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসুচির কারণে সংঘর্ষ এড়াতে আগে থেকেই ঘটনাস্থলে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এদিন নতুন কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সম্পাদক রফিকুল আলমের নেতৃত্বে বুড়িরবাজার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে দলীয় কার্যালয়ের দিকে আসছিল। মিছিলটিতে বেশ কিছু নেতারা প্রকাশ্যে দেশি অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেন। এতে আতংকিত হয়ে পড়ে পুরো জনপদ। মুহুর্তে বন্ধ হয়ে যায় সব দোকানপাট। লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কে যান চলাচলও অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়ে।

একই সময় পদবঞ্চিত গ্রুপটি দলীয় কার্যালয়ে হাইব্রিড কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। নতুন কমিটি গ্রুপের মিছিল দলীয় কার্যালয়ে পৌছলে উভয় পক্ষের উসকানীমূলক স্লোগানে তাদের মধ্যে ইটপাকটল ছোড়া শুরু এবং সংঘর্ষ জড়ায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে পুলিশ লাঠিচার্জসহ তিনটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে ইটপাটকলের আঘাতে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এছাড়া পুলিশের লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেডের আতংকে পালাতে গিয়ে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হন।

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুল ইসলাম বলেন, দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ছিল। দুইটি গ্রুপই মুখোমুখি স্থানে পৌছলে উসকানীমূলক স্লোগানে সংঘর্ষে বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে তিন রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে। আর পাথরের আঘাতে ৫-৬ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।